নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কলাপাড়ায় নির্বিচারে বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া নিধন চলছে। সুক্ষ্ম এক ধরনের জাল দিয়ে কাঁকড়ার পোনাসহ দেদার নিধনে নিত্যদিন মারা পড়ছে লাখ লাখ কাঁকড়া। এতোটাই ছোট সাইজের কাঁকড়া নিধন চলছে যে বিক্রি করতে না পেরে শুটকি করে মেশিনে ফিস ও পোল্ট্রীর খাবার তৈরি করা হচ্ছে। কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর, রাবনাবাদ চ্যানেল, আন্ধারমানিকসহ বিভিন্ন নদ-নদী ও খালে নির্বিচারে বেহুন্দী জালসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাঁকড়া নিধন চলছে। কাঁকড়ার পোনা নিধনে মৎস্য বিজ্ঞানীরা উৎকন্ঠা প্রকাশ করেন। এখানকার বেড়িবাঁধের ঢালে, নদী তীরে, চরে কাঁকড়ার পোনা ফ্রি-স্টাইলে শুটকি করা হচ্ছে। কাঁকড়া মূলতঃ আর্থোপ্রোডা পর্বের একটি ক্রাস্টসিয়া প্রাণী। কাঁকড়ার শরীর একটি পুরু বহিঃকঙ্কালে আবৃত থাকে এবং এদের এক জোড়া দাঁড়া থাকে। বাংলা পিডিয়ার তথ্যমতে, এ পর্যন্ত কাঁকড়ার ছয় হাজার ৭৯৩টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। সূত্রমতে, বাংলাদেশে লোনা, আধালোনা ও স্বাদুপানি থেকে এ পর্যন্ত ১৪টি গোত্র এবং ২৫টি গনের অধীনে মোট ৪০ প্রজাতির কাঁকড়ার তিনটি ঋষি বা ভূয়া কাঁকড়া ও ৩৭টি আসল কাঁকড়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপুর্ণ জাত বা শীলা কাঁকড়া সাধারণত সমুদ্রের পানিতে ডিম ছাড়ে। জোয়ারের পানিতে লার্ভাগুলো সমুদ্র উপকূলে চলে আসে। এরা ১৮-২৪ মাসের মধ্যে প্রাপ্ত বয়ষ্ক হয়। প্রাপ্তবয়ষ্ক একটি কাঁকড়ার ওজন সাধারণত ৩০০-৬০০ গ্রাম হয়। তবে এক কেজি পর্যন্ত হতে পারে। স্ত্রী কাঁকড়া নিষিক্ত ডিমগুলোকে প্রশস্ত করে উদরের মধ্যে বহন করে। কাঁকড়া মোহনা ও জোয়ার-ভাটা এলাকার একটি প্রধান উভচর প্রাণী। কলাপাড়া-কুয়াকাটা অঞ্চলে সাধারনত লাল কাঁকড়া ছাড়াও ধূসর বর্ণের প্রচুর কাঁকড়ার দেখা মেলে। লাল কাঁকড়া সৈকতের বীচে, সাগর মোহনার বেলাভূমে দেখা যায়। বিশেষ করে গঙ্গামতি সৈকতের দীর্ঘ বেলাভূমে লাল কাঁকড়ার বিচরণ দেখা যায়। সদ্য জেগে ওঠা চর বিজয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লাল কাঁকড়ার বিচরণ দেখা যায়। আর সাগরে, নদীতে এক ধরনের সুক্ষ্ম ফাঁসের বেহুন্দি জালে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমান কাঁকড়া। ছোট সাইজের এ কাঁকড়ায় গোটা উপকূল ছয়লাব হয়ে আছে। এসব কাঁকড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়না। বিলে, নদীর তীরে এবং বেড়িবাঁধের ঢালে এই কাঁকড়া শুটকি করা হয়। জেলেরা জানান, মাছ এবং পোল্ট্রির খাবার তৈরি করা হয় এই কাঁকড়ার শুটকি দিয়ে। সাগরপাড়ের পরিবেশ প্রতিবেশ জীব-বৈচিত্র রক্ষায় কাঁকড়ার বিকল্প নেই। কিন্তু নির্বিচারে নিধনের কারণে সবকিছু হুমকির মুখে পড়ছে। নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে কখনও কখনও অভিযান পরিচালিত হলেও ছোট সাইজের কাঁকড়া নিধন বন্ধ হয়নি। কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জহিরুন্নবী জানান, শুধু কাঁকড়া নয় মাছ শিকারসহ বিভিন্ন ধরনের সুক্ষ্ম জালের ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি কাঁকড়ার পোনা নিধনকে মর্মান্তিক বলে মন্তব্য করেন। মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ লতিফুর রহমান জানান, টেকনাফ থেকে কুয়াকাটার উপকূলীয় এলাকায় সাধারণত ১৬ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। সুক্ষ্ম ফাঁসের জাল দিয়ে কাঁকড়া নিধনে তিনিও উৎকন্ঠা প্রকাশ করেন। কারণ এই জালে কাঁকড়ার সঙ্গে ছোট্ট সাইজের বিভিন্ন রেণুসহ পোনা মাছ এবং মাছের খাবার, অনুজীবও মারা পড়ছে। তিনি মন্তব্য করেন, গোটা উপকূলে যদি মাত্র পাঁচটি বছর সুক্ষ্ম ফাঁসের জালের ব্যবহার বন্ধ করা যায়; তাইলে উপকূলে মাছে এবং কাঁকড়ায় সয়লাব হয়ে যাবে।
Leave a Reply